হাতির পাল vs গ্ৰামবাসী


                                            Duty করতে করতে হঠাৎ করেই পরিকল্পনা হল বিকালে বেড়াতে গেলে হয় না। যেই কথা সেই কাজ। ঠিক করে নিলাম বিকালে বেড়িয়ে পড়বো জঙ্গল মহলের উদ্দেশ্য। গন্তব্য বিখ্যাত জঙ্গল এলাকা "পিড়াকাটা", মেদিনীপুর থেকে মাত্র ৪০ কিমি দূরে। সেই মতো আমরা 3 idiots বেরিয়ে পড়লাম একটা Scooty নিয়ে। Chandan চালকের আসনে, মাঝে Tushar আর পেছনে ক্যামেরা বাগিয়ে স্বয়ং আমি।।

                                             প্রায় ১৫/২০ মিনিট চলার পর মেদিনীপুরের শহুরে জীবন ছেড়ে প্রবেশ করলাম দূষণ মুক্ত গ্ৰাম্য এলাকায়। দুই দিকে শাল সেগুনের সারি। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পিচ ঢালা কালো রাস্তা। নির্জন, নিস্তব্ধ পরিবেশ, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমারোহ। মাঝে মাঝে ছোট ছোট জনবসতি। যে যার কাজে ব্যস্ত। এককালের মাওবাদী উত্তপ্ত এলাকায় উত্তেজনার কোনো ছাপ নেই।।
                                         একে একে আমরা অনেক গুলো জঙ্গল পেরানোর পর পৌঁছালাম "গড়মালের" কাছে। দেখলাম রাস্তায় পাশে প্রচুর লোক দূরের জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে আছে। কৌতূহল চেপে রাখতে পারলাম না। জিজ্ঞাসা করতেই উনারা বললেন "এই যে হাতি বেরিয়েছে, ওই যে দেখা যায়"। হাতি নামটা শুনতেই শরীরের মধ্যে নিমেষে বিদ্যুৎ খেলে গেল। জঙ্গলে এসেছিলাম নিছক ঘুরতে, আর উপরী পাওনা "জংলি হাতি 🐘"। এতো জল না চাইতেই তুমুল বৃষ্টি। আমরা ও গ্ৰামবাসীদের সাথে মেতে উঠলাম। পীচ রাস্তা ছেড়ে মেঠো রাস্তায় Scooty নামিয়ে দিলাম। তারপর এলো ওই দৃশ্য। সামনের কয়েকটি ধানের জমি। তারপর ই হাতির পাল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এক দুই নয়, সামনে ৮০/৯০ টি বুনো হাতি।


                                         দৌড়ে গেলাম ক্যামেরা বাগিয়ে অন্যান্য গ্ৰামবাসীদের সাথে। Tushar, Chandan ভীতুর দল থাকুক পেছনে। প্রায় হাতির কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। মনভরে ফটো তুললাম। গ্ৰামবাসীরা জমায়েত হয়েছে হাতিগুলো তাড়াতে। গ্ৰাম্য এলাকায় থেকে দূরে রাখতে। হাতি দের তাণ্ডবে সহজ সরল জীবনে উত্তেজনা এনে দিয়েছে। বাড়ি ঘর, মানুষ জন কিছুই বাদ দিচ্ছে না। ধানের জমির কথা আর কি বলবো। এক পলকে ই সাবাড়। যেন জমি গুলোর মালিক ওরাই, যা খুশি তাই করতে পারে।।

                                     বুঝতে পারছিলাম গ্ৰামবসীদের দুর্দশার কথা। ''দিন আনা দান খাওয়া'' মানুষ গুলোর জীবনের সামান্য সঞ্চয় টুকু হাতিরা কেড়ে নিয়েছে। তাইতো কয়েক শত গ্ৰামবাসীরা জড়ো হয়েছে এখানে। বাজি ফোটানো, ঢাক ঢোল পিটিয়ে শব্দ, সবার এক সাথে চিৎকার। না কোনো কাজ হলো না। আনা হলো ট্রাক্টর, কিন্তু ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। উল্টে সব থেকে বড় দাঁতাল হাতিটা এগিয়ে এলো সামনের দিকে (মনে হয় উনি হলেন দলনেতা)। সবাই দৌড় লাগালো। হাতিদের কোনো ভয় ডর নেই, কাকেই বা ভয় পাবে ?? এই দুনিয়ার সব থেকে বড় প্রাণী, ওদের গর্বের শেষ নেই। আর ওরা কিনা মানুষের মতো ক্ষুদ্র জীব কে ভয় পাবে !!

                                     ওখানকার সহজ সরল মানুষ জন আমার হাতে DSLR দেখে ভাবছিল আমি বোধহয় কোনো সাংবাদিক। সবাই জানতে চাইছিল কোন চ্যানেল থেকে গেছি ?? সবাই আমায় ফটো তুলতে সাহায্য করেছিল। আর বলছিল " বাবু ভালো করে ফটো তুলুন, সবাই যেন‌ জানতে পারে, সবাই যেন দেখতে পায়। তাতে যদি সরকারের সাহায্য পাই -----------------"।।
Pirakata
Place :- Garhmal, West Midnapore

No comments

Powered by Blogger.