"চন্দনেশ্বর:- জয় বাবা ভোলানাথ"

                                       
                                             ।। চন্দনেশ্বর :- বাবা ভোলানাথর অধিষ্ঠান ।।

                              ভৌগলিক অবস্থান হেতু এটি ওড়িশার​ বালেশ্বর জেলায় অবস্থিত হলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে মাত্র ৩ কিমি। তাই দীঘা এলেই বাবার দরবারে একটু ঢুঁ মেরেই যায়া যেতে পারে।

প্রতি বাংলা বছরের শেষ পাঁচ দিন চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে দুই রাজ‍্যের কয়েক লাখ মানুষের ঢল নামে এখানে। যাদের পোশাকি​ নাম হলো "ভক্তা"র দল। আমি ও সেই ভক্তা দের একজন, যদি একটু পুণ‍্যিটুণ‍্যি হয়।

ওইসময় সকাল সকাল মন্দিরের​ পুকুরে​ স্নান করে শুরু হয় মহাদেবের বন্দনা। কিছু ভক্তা হাত জোড় করে "ওম নমো শিবায়" বলতে বলতে মন্দিরের চারিদিকে ৩ বার পরিক্রমা করেছে। কেউ বা আবার পুকুর ঘাট থেকেই গড়িয়ে গড়িয়ে মন্দির পরিক্রমা করছে, কেউ আবার নাক মেঝেতে ঘষতে ঘষতে মন্দির পরিক্রমা করছে। উনাদের দেখলেই মনে ভক্তি হয়। পরিক্রমার​ শেষে ছোট ছোট গোষ্ঠীর​ মাঝে চলে শিবের বন্দনা। এর মাঝে কোন কোন ভক্তা বাবার জন্য নিয়ে চলেছেন দুধ, কেউ বা ডাব অথবা বাবার প্রিয় গাঁজা। যে যার মতো করে পূণ‍্য অর্জন করেছে।


 মন্দিরের পুকুর, এখানে স্নান করে শুরু হয় শিবজীর বন্দনা।

 নাক ঘষড়ে চলছে মন্দির পরিক্রমা।


 

                             
                              সারাদিন নির্জলা উপবাসে চলে বাবার উপাসনা। জলতো ছাড়ুন, থুতু গেলাও মানা। সন্ধ‍্যায় বাবার নিজস্ব দূত "পাণ্ডা"রা অর্ঘ্য জল ছিটোবে। আর ওই জল ভক্তার শরীর স্পর্শ করলেই পাওয়া যাবে রাতে কিছু খাবার খাওয়ার অধিকার। অর্ঘ্য তো নিতেই হবে, না হলে কাল ও খাবার জুটবে না। অর্ঘ্য জল নেয়ার জন্য লেগে যায় হুড়োহুড়ি, কে আগে অর্ঘ্য নেবে। এতো ছোট জায়গায় ৪/৫ লাখ লোকের জমায়েত। কোন ভক্তাই বুঝতেই চায়না অর্ঘ্য জল শেষ হয়ার নয়। পুকুর আছে তো, কলসি কলসি ভরে জল আসছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের​ মাইকের আওয়াজ সতর্কবার্তা ম্লান হয়ে যায়, ভক্তা দের "জয় বাবা চন্দনেশ্বরের জয়" চিৎকারে। এবার খাওয়ার​ পালা, তেল হলুদ মসালা ছাড়াই খাবার​ কি সুন্দর সুস্বাদু। এতো ভোলাশঙ্করের লীলা।।







শেষের দিনটি এখানে আরো আকর্ষণীয়। শেষ দিন বলে এমনিতেই মনে একটা জোর চলে আসে। সকাল থেকেই চারিদিকে সাজ সাজ রব। স্থানীয় কূলকূশলীরা দেব দেবীদের সাজসজ্জা করে এলাকা প্রদক্ষিন করে। এছাড়াও রয়েছে "মালা চন্দন" অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে অপরিচিত ভক্তারা একে অপরকে চন্দন মালা দিয়ে বরণ করে নেয়, সাথে বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। যাই হোক এসব দেখে চললাম পুকুরে স্নান করতে। গোটা রাস্তাটাই থুতু আর কফ্ ভরা। দেখে ও না দেখার ভান করে এগিয়ে চলো। ঘৃনা করা পাপ যে।আর ওই ছোট্ট পুকুরে এতোদিন ধরে এতোজনের স্নানের​ ফলে জল পচে কালো। মাছ পচে ভেসে গেছে। তবুও কারুর মনে কোন শঙ্কা নেই। কেউ নাকি অসুস্থ হয়না। এই হচ্ছে "বাবার মহিমা"। তার মাঝে দেখলাম দল বেঁধে কয়েকজন একটি কাঠের গুঁড়িকে জল থেকে উপরে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাঠ টিতে শ‍্যাওলা পড়ে যাওয়ার জন্য বারবার​ পিছলে জলে পড়ে যাচ্ছিল। অনেক কষ্টে কাঠ টিকে উপরে নিয়ে এলেও, পাণ্ডারা​ বিনা কারনে ওদের উপর লাঠি মারছিল। আমার ব‍্যাপারটা বোধগম্য হলো না। আমার এক আত্মীয়ের পিঠেও লাঠির ঘা পড়েছে, পুরো লাল হয়ে গেছে পিঠটা। আমার অপর এক আত্মীয় বললো ''যাদের উপর লাঠির ঘা পড়ে তারাই নাকি ভাগ‍্যবান''। সেই অর্থে আমার আত্মীয় ভাগ‍্যবানের তালিকায়, আর ওই পাণ্ডাটি লাঠি মেরে সবাইকে ভাগ‍্যবান হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। হায়রে ।। পূণ্য অর্জনের​ জন্য কতো কিছুই না করতে হয়। 

 মালা চন্দন অনুষ্ঠান

 মাছ পচে ভেসে গেছে।
 
 এই কাঠের গুঁড়িটিকে জল থেকে উপরে আনার চেষ্টা করছে ভক্তারা।

দেবদেবীদের এলাকা প্রদক্ষিন।           

                      আমি এতো ভাগ‍্যবান না, মনে হয় খুব পাপি টাপি মানুষ, তাই মার খাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছি। নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার​ জন্য নিজেই বললাম "কিছু ছবি পেলেই তুমি ........................" ।।


                        Map:- Chandaneswar Shiv Temple

1 comment:

Powered by Blogger.