Offbeat Nepal

:: ধূলিখেল :- প্রকৃতির ব্যালকনিতে বসে হিমালয় দর্শন ::
                   যারা হিমালয়কে দু চোখ ভরে উপভোগ করতে চান, অথচ শহরের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে চান , নির্জনতা পছন্দ করেন, তাদের জন্য সেরা জায়গা হল নেপালের নতুন পর্যটন কেন্দ্র "ধূলিখেল" কাঠমান্ডুর কাছেই অথচ কাঠমান্ডুর জনারণ্য, কোলাহল, দূষণ থেকে বেরিয়ে এসে দু'টো দিন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য দারুন জায়গা হল সল্প পরিচিত ধূলিখেল। ধূলিখেল এক অসাধারণ ভিউ পয়েন্ট। যেন প্রকৃতির তৈরি এক ব্যালকনিতে বসে হিমালয় দর্শন। নিজের অবস্থান মাহাত্ম্যের গুনে ধীরে ধীরে নেপালের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিচ্ছে। তাইতো ২০১৪ সালের সার্ক সম্মেলনে সময় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী "নরেন্দ্র মোদী" সহ বাকি সম্মেলনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্বল্প স্থায়ী ঠিকানা ছিল ধূলিখেলের বিলাসবহুল Dwarika Resort
                     প্রায় ১৫৫০ মিঃ উচ্চতা বিশিষ্ট ধূলিখেল থেকে হিমালয় দর্শন এক অভূতপূর্ব অনুভূতি। তেমনি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল ধূলিখেলের সূর্যোদয়। সূর্যোদয়  সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করার পক্ষে ধূলিখেল হল আদর্শ মঞ্চ। আর পরিস্কার দিনে হিমালয়ের অসংখ্য গিরিশিখর চোখে পড়ে যার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু বিশ্ববিখ্যাত শৃঙ্গযেমন - মাউন্ট এভারেস্টেকাঞ্চনজঙ্ঘামাকালুলোৎসেনুপসেধৌলাগিরিমানাসুলহিমলচুলিগৌরীশঙ্করল্যাংটাং  আরো অনেক শৃঙ্গ

  ধূলিখেলের ইতিহাস খুব পুরোনো। তার প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে ধূলিখেলের আনাচে কানাচে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে চললে নজরে পড়বে অষ্টবিংশ শতকের "নেওয়ারি স্থাপত্য" নিদর্শন। শুধুমাত্র হিমালয় প্রেমীদের জন্য নয়, হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দের কাছে ধূলিখেল সমান ভাবে সমাদৃত। পুরোনো ধূলিখেল এলাকায় বেশ কয়েকটি পুরনো মন্দির রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ বিহার
যাতায়াত :- নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ৩০ কিঃমিঃ দূরের ধূলিখেল যাওয়ার জন্য কাঠমান্ডুর রত্নাপার্ক বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিঘন্টায় বাস ছাড়ছে ধূলিখেল যাওয়ার। এছাড়াও ২৫০০-৩০০০ ভারতীয় টাকায় ছোট গাড়ি পাওয়া যায়। আর যারা প্রথমেই ধূলিখেল যেতে চান উনাদের জন্য রয়েছে বর্ডার থেকেই ১০ সিটের ছোট গাড়ি
                 দ্রষ্টব্য :- সবার উপরে রয়েছে শ্বেতশুভ্র হিমালয়। পূব আকাশ জুড়ে রয়েছে বিখ্যাত সব শৃঙ্গ গুলোর অবস্থান। হিমালয় ছাড়াও ধূলিখেলে রয়েছে আরো বেশ কিছু দ্রষ্টব্য। পুরোনো ধূলিখেলে বিষ্ণু মন্দির, গনেশ মন্দির, গীতা মন্দির, ভগবতী মন্দির। নতুন বেড়ে চলা ধূলিখেলের দিকে রয়েছে বেনুবন তথা গৌতম বুদ্ধের বিশাল মূর্তি, পিকনিক স্পট, পাহাড়ের চূড়ায় কালীমন্দির ওয়াচ টাওয়ার এবং দিগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড়।ধূলিখেল কে কেন্দ্র করে ঘুরে নেয়া যায়, কাঠমান্ডু - তিব্বত বানিজ্য পথের ওপর অবস্থিত মাত্র কিমি দূরের "বানেপা" জনপদ। ১২ কিলোমিটার দূরের বৌদ্ধ মঠ "নমোবুদ্ধ" এবং কিমি দূরের হিন্দু পূণ্যতীর্থ "পনৌটি"।।
থাকার জায়গা:- নতুন পর্যটন কেন্দ্র হলেও ধূলিখেলে থাকার জায়গার অভাব নেই। শহরের অধিবাসীরা বেশ মিশুকে অতিথি বৎসল। রাস্তার লোকেরা সাহায্য করার জন্য নিজেরাই এগিয়ে আসেন। নতুন গড়ে ওঠা প্রায় সব হোটেল গুলো থেকে হিমালয় দৃশ্যমান। এখানে যেমন রয়েছে বিলাসবহুল হোটেল Dwarika Resort, Dhulikel Lodge Resort, Dhulikel Holiday Inn, Namobuddha Resort তেমনি রয়েছে মধ্যবিত্ত দের নাগালের মাঝে Tashi Delek Guest House, Himalayan Sunrise Guest House, Buddha Garden Homestay.

                             বিঃ দ্রঃ :- ধূলিখেল থেকে নমোবুদ্ধ অনেকে ট্রেকিং করে যান। আগে থেকে হোটেলে বলে না রাখলে ছোট গাড়ি পাওয়া খুব মুশকিল, তবে ধূলিখেলকে জানতে হলে পায়ে হেঁটে ঘোরা দরকার। পারলে Tashi Delek Guest House থাকার ব্যবস্থা করুনউনাদের ব্যবহার ভোলার নয়। অনেক জায়গায় থেকেছি অনেক জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু উনাদের আতিথেয়তা সারা জীবন মনে থেকে যাবে
Place :- Dhulikel, Nepal
Date :- 7 & 8 th May 2018
****************************************************************************************************************************

 
:: নমোবুদ্ধ :- মহান ঋষি গৌতম বুদ্ধের এক করুণ আত্মত্যাগের কাহিনী ::                                                                                কাঠমান্ডুর দক্ষিণ পূর্বে মাত্র ৪০ কিমি দূরে ধূলিখেলের পাশেই 'গান্ধা মাল্লা' পাহাড়ের মাথায় বৌদ্ধদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র ধর্ম স্থান হলো "নমোবুদ্ধ" শুধু মাত্র ধর্মপ্রাণ মানুষ নয় প্রকৃতি প্রেমী দের জন্যও নমোবুদ্ধ হল সেরা জায়গা। বৌদ্ধদের সেরা তিন স্তূপ-এর মাঝে নমোবুদ্ধ হল একটি। অপর দূটি কাঠমান্ডুর "বৌদ্ধনাথ" "সয়ম্ভুনাথ" নেপালে অনেকেই বেড়াতে আসেন অথবা তীর্থ করতে আসেন কিন্তু নমোবুদ্ধ না এসেই ফিরে যান। অথছ সঠিক ভাবে ভ্রমণসূচি বানিয়ে ভ্রমন তালিকায় মাত্র এক দিন যূক্ত করলেই অনায়াসে ঘুরে নেওয়া যাবে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের পূর্ব জন্মের লীলাভূমি
                       ইতিহাসের পাতা থেকে :- প্রথমেই জেনে নেই নমোবুদ্ধ' ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর আগেকার কথা। এই অঞ্চলে তখন রাজত্ব করছেন মহারাজ 'মহারাথা' মহারাজের তিন পুত্র, তার মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান হলেন "মহাষ্টতু" (তিব্বত : নিংগুই কিংসপো) তিনি যেমনি বিদ্যান তেমনি দয়াবান, সেই সঙ্গে বহু সৎ গুনের অধিকারী। স্বাভাবিক কারনেই তিনি সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন। একদিন মনোরম আবহাওয়া দেখে তিন ভাই চললেন জঙ্গল ভ্রমনে। ঘুরতে ঘুরতে উনারা এসে পৌঁছোন পাহাড়ের গায়ে এক গুহায় এবং দেখতে পান এক বাঘিনী ওর পাঁচ বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। বাঘিনীটিকে দেখেই রাজপুত্ররা বুঝতে পারলেন যে বাঘিনী খুব ক্ষুধার্ত, আর ক্ষুদার ভারে খুব রুগ্ন। এত রুগ্ন যে নড়া চড়া করতে পারছে না, মৃত্যু আসন্ন প্রায়। মাতৃ স্নেহে অন্ধ বাঘিনী গুহা থেকে বের হয়ে খাবার খুঁজতে যায়নি যদি বাচ্চাদের কোনো অনিষ্ট হয়। কিন্তু নিজে খিদের জালায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে দিনের পর দিন ধরে
                          প্রথমে তিন রাজকুমার এসব দেখে এই জায়গা ছেড়ে চলে যান, কিন্তু কিছু ক্ষনের মাঝে কণিষ্ঠ রাজকুমার মহাষ্টতু আবার ফিরে আসেন। বাঘিনী কে দেখে দয়াবান রাজকুমারের মনে দয়ার উদ্রেক হয়, তিনি নিজের হাতে নিজের শরীরের মাংস কেটে বাঘিনীর মুখে তুলে ধরেন। বাঘিনীও রাজকুমারের নিজের উৎসর্গ করা শরীর গ্ৰহন করে। কিছুক্ষণ পর অপর দুই রাজকুমার ভাইর খুঁজে এসে দেখেন শুধু মাত্র শরীরের "হাড় চুল" অবশিষ্ট পড়ে রয়েছে। রাজকুমাররা ওই "হাড় চুল" তুলে নিয়ে আসেন, এবং ওই "হাড় চুলে" উপর তৈরী হয় এক স্তূপ। যা আজকের দিনে নমোবুদ্ধ স্তূপ

                     এর প্রায় ৩৫০০ বছর পর স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ উনার দুই শিষ্যকে নিয়ে সঞ্জ দ্য ফিয়ূজসের নামে জঙ্গলাকীর্ণ এই গ্ৰামে উপস্থিত হন। প্রথমেই প্রণাম করে স্তূপ টিকে তিন বার পদক্ষিণ করেন। সর্বশেষে বললেন উনিই ছিলেন ৩৫০০ বছর আগের মহান রাজকুমার "মহাষ্টতু" গৌতম বুদ্ধ এখানে আসার পর জায়গাটি ধীরে ধীরে নমোবুদ্ধ নামে সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠে
লোককথা অনুসারে "মহাষ্টতু" অর্থাৎ প্রথম গৌতম বুদ্ধ এখানে দেহ রাখেন। " নমোবুদ্ধ" বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মস্থানে পরিনত হয়েছেন। যুগে যুগে মহান ব্যক্তিরা এখানে আসেন পূণ্য করতে। সারা বিশ্ব থেকে বৌদ্ধ ধর্মগুরূ একবার হলেও এই পূণ্যভূমি তে এসে প্রর্থনা করে যান
                 প্রকৃতি প্রেমিকদের কাছে নমোবুদ্ধ :- নেপালের কার্ভ জেলার সর্বোচ্চ জায়গায় ( ১৭৫০ মিঃ) রয়েছে এই বৌদ্ধ বিহার। শুধু মাত্র তীর্থ যাত্রীদের জন্য নয় ভ্রমনার্থী দের জন্যও নমোবুদ্ধ সমান ভাবে আদরণীয়। স্তূপ থেকে প্রায় ১০০০ সিঁড়ি অতিক্রম করে পাকদণ্ডী পথ বেয়ে উপরে পৌঁছাতে হবে। উপরে পৌঁছোলেই অবাক হওয়ার পালা। উপর থেকে চারিদিকের দৃশ্য খুবই মনোরম। ৩৬০° ডিগ্ৰী এঙ্গেলসে সবুজ পাহাড়ের সারি। যেদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবূজ আর সবূজ। আর তার পরেই দিগন্ত জুড়ে রয়েছে আমাদের প্রিয় সাধের হিমালয় ( পরিস্কার দিনে এখান থেকে হিমালয়ের অনেক গুলো শৃঙ্গ দেখা যায়। তা নাকি এক কথায় অসামান্য) তাছাড়া দূরে একটা দুটো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পাহাড়ের ধাপ কেটে চাষ হচ্ছে
                অবস্থান গুনে বিহারটি যেমন আকর্ষণীয় তার দাবি রাখে তেমনি দাবি রাখে সৌন্দর্য্য গুনে। মঠে রয়েছে ব্রোঞ্জ- এক বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি। এছাড়াও ছোট ছোট মূর্তি (বাঘিনী, বাঘের বাচ্চা) করে তুলে ধরা হয়েছে ৬০০০ বছর আগের ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মুখে খাবার তুলে দেবার ঘটনা। গুহাটিকেও সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে যা পৌরাণিক কাহিনীর সত্যতা প্রমাণ করে। (ছবি তোলা নিষেধ থাকায় মঠের ভেতরের কিছু মূর্তির ছবি নিতে পারিনি) এছাড়াও বৌদ্ধদের রীতি মেনেই পুরো পাহাড় টাই রঙ্গিন পতাকা দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে, যা দেখা চোখের পক্ষে খুব আরামদায়ক
                  কি করে যাবেন :- নমোবুদ্ধ কাঠমান্ডু থেকে ৪০ কিমি এবং ধূলিখেল থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত। দুটি জায়গার যে কোনো এক জায়গায় থাকলেও গাড়ি বুক করে অনায়াসে ঘুরে আসা যায় এই পবিত্র বৌদ্ধ মঠটি।
যারা বাসে করে ঘুরতে চান প্রথমেই কাঠমান্ডুর রত্না পার্ক বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরে বানেপা চলে আসুন। বানেপা থেকে নমোবুদ্ধ যাওয়ার ছোট বাস নিন (প্রতি ২০ মিনিট অন্তর), ভাড়া নেবে নেপালী ৬০ টাকা প্রতি জনা। যারা ধূলিখেলে থাকবেন উনারাও বানেপা থেকে আসা বাস ধরে নিন, ভাড়া নেপালি ৫০ টাকা। নমোবুদ্ধ যেতে হলে ধূলিখেল হয়েই যেতে হবে। তবে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ, কোন কোন জায়গায় রাস্তা নেই বললেই চলে। তবে খুশির খবর এই যে রাস্তা সারাই-এর কাজ শুরু হয়েছে

                                Trekking করে নমোবুদ্ধ :- যারা ঘুরতে গিয়ে একটু Adventure পছন্দ করেন, Trek করতে ভালোবাসেন, উনাদের জন্য নমোবুদ্ধ হল Perfect Choice. ধূলিখেল থেকে Trek করে নমোবুদ্ধ যাওয়ার খুব সুন্দর একটি রাস্তা রয়েছে। দুরত্ব মাত্র কিলোমিটার। বিদেশীদের কাছে এটি একটি Perfect Destination ধূলিখেলের কালীমন্দিরের পাস দিয়েই নমোবুদ্ধ যাওয়ার পায়ে হাঁটা পথ। এছাড়াও পনৌটি থেকে Trek করতে পারেন। হিমালয়কে সাক্ষী রেখে সবূজ পাহাড়ের বুক চিরে ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে নমোবুদ্ধ Trek করার অভিজ্ঞতা সারা জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে
            কোথায় থাকবেন :- নমোবুদ্ধতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। আপনাকে ধূলিখেল অথবা অন্য কোনো শহরে ফিরে আসতে হবে। মঠের নিজস্ব Guest House থাকলেও সাধারনের থাকার ব্যবস্থা হয় না। কাঠমান্ডু থেকে যারা গাড়ি করে আসবেন, উনারা নমোবুদ্ধর সাথে রাখুন হিন্দু তীর্থ পনৌটি এবং সাঙ্গার বিশ্বের সর্বাধিক লম্বা শিব মূর্তি (১৪২ ফূট)
বিঃদ্রঃ :- ঘুরতে গিয়ে কোন ময়লা ফেলে আসবেন না বৌদ্ধ বিহারটি অতিব পরিস্কার।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় সাথে জল রাখবেন।
পাহাড়ের উপরে খাবার দোকানের অভাব রয়েছেতাই সাথে শুকনো খাবার থাকলে খুব সুবিধা হয়।
যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে উনাদের উপরে না উঠাই শ্রেয়। খুব খাড়া সিঁড়ি।
) Trek করলে অবশ্যই স্থানীয় গাইড নেবেন।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফেরার সময় বাসের সময়সূচি জেনে নেবেন।
নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে নমোবুদ্ধ থেকে সূর্যাস্ত দেখুন
Namo Buddha
Place :- Dhulikel, Nepal
7th May, 2018

***************************************************************************************************

:: বানেপা রক্ষাকর্তী : দেবী চন্দেশ্বরী :: 🙏🙏
                   নমোবুদ্ধ দেখার পর আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল কার্ভে জেলার সর্ব বিখ্যাত মন্দির "দেবী চন্দেশ্বরী"। কাঠমান্ডু র ২৬ কিমি পূর্বে ও ধূলিখেলের ৫ কিমি দূরে আরনিকো হাইওয়ের উপর অবস্থিত বানেপা শহর (৪৮০০ ফুট) থেকে এক কিমি ভেতরে "পূণ্য মাতা নদী"র তীরে সবূজ পাহাড়ের পাদদেশে চন্দেশ্বরী দেবীর অধিষ্ঠান। সপ্তদশ শতকের নির্মিত এই মন্দিরটি নেপালের অন্যান্য মন্দিরের মত পরিচিতি না থাকলেও স্থানীয় দের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ইঁটের তৈরী তিন চালা বিশিষ্ট প্যগাডো মন্দিরটি হলুদ রঙের ছাউনী দেওয়া। মন্দিরের সামনে স্তম্ভ করে তার উপর পশু-পাখি দের বেশ কিছু প্রতিকৃতি। মন্দির প্রবেশদ্বারে দেবী দূর্গার মূর্তির নিচ দিয়ে যাতায়াত। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য মন্দিরের দক্ষিণ অংশ জুড়ে "কাল ভৈরবের" এক বিশাল চিত্র (Graffiti)। যা নেপালের মধ্যে সর্ব বৃহৎ। তবে মন্দির চত্ত্বরে ২০১৫ সালের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের নির্দশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।।
                              কথিত আছে দেবী (সতী) এখানে দানব রাজ চন্দাসুরের সাথে লড়াই করেছিলেন। ভগবান শিবের বর প্রদত্ত অসুর রাজ চন্দা দেবতাদের কাছে অপরাজেয়। পরাক্রমশালী দানব রাজ দেবতাদের উপর আক্রমণ শুরু করতে ব্রহ্মা র উপদেশে দেবতারা মাতৃভূমি (বানেপার বনাঞ্চল) তে আশ্রয় নেন। কিন্তু যুদ্ধ জয়ের ইচ্ছায় রাজা চন্দা বিশাল ভূতের বাহিনী নিয়ে মাতৃভূমি আক্রমণ করে বসেন। চন্দাসুরের ভয়ে দেবতারা পশু-পাখির রুপ নিয়ে পালিয়ে বেড়ান। কিন্তু দেবী সতী একাই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন এবং ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর রাক্ষস রাজের শিরচ্ছেদ করেন। সেই থেকে দেবী এখানে রক্ষাকর্তী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন। তাই হয়তো ২০১৫ ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে বানেপা বাসীদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
                        সতী এখানে বিভিন্ন নামে পূজিত হয় জগৎজননী, মহামায়া, চণ্ডিকা, সরস্বতী, রুদ্রাদেবী, ভগবতী, উগ্ৰতারা। তবে বানেপা বাসীদের কাছে তিনি দেবী চন্দেশ্বরী। প্রতি বছর নেপালী নববর্ষের প্রথম পূর্ণিমায় দেবীর শোভাযাত্রা বের হয়। যেটি "চন্দেশ্বরী যাত্রা" নামে পরিচিত। এই সময় সারা নেপাল থেকে ভক্তরা এখানে এসে জড়ো হয়। মশালের আলোয় সারা বানেপা কে আলোকিত করে দেবী শহর পরিক্রমা করেন। পরের দিন বিশাল শোভাযাত্রা র মাধ্যমে দেবী ফিরে আসেন নিজের অধিষ্ঠানে।
                                  সবূজ পাহাড়ের কোলে মন্দিরের অবস্থানটি বেশ চোখ জুড়ানো। এছাড়াও পাহাড়ের উপর নাকি একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। সেখান থেকে পাখির চোখে পুরো শহরটিকে দেখে নেওয়া যায়। সময়ের অভাবে আমরা পাহাড়ের উপর যেতে পারিনি। তেমনি দেখা হয়ে উঠেনি নদীর পাশে বড় বড় পাথরের উপর "দেবী ও চন্দা" রাজের পুরান যুদ্ধের চিহ্ন, যা আজও বিদ্যমান।
Chandeswori Temple
Place :- Banepa, Nepal
7th May, 2018

No comments

Powered by Blogger.